মাশরাফি বিন মর্তুজার দুরন্ত সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৭ উইকেট আর ৪ বল হাতে রেখে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিপিএল চ্যাম্পিয়ন হলো ইমরুল কায়েসের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। সবমিলিয়ে কুমিল্লার এটি চতুর্থ শিরোপা। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৫ রানের সংগ্রহ পায় সিলেট। জবাব দিতে নেমে ৪ বল হাতে রেখেই জয় পায় কুমিল্লা।

টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নামে সিলেট স্ট্রাইকার্স। তাদের দারুণ শুরু এনে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আন্দ্রে রাসেলের করা প্রথম ওভারে ১৮ রান তোলে সিলেট। কিন্তু পরের ওভারেই খেয়ে যায় ধাক্কা। রানের খাতা না খোলা তৌহিদ হৃদয়কে প্রথম বলেই বোল্ড করেন তানভীর ইসলাম। গত কয়েক ম্যাচের মতো এবারও উপরে ব্যাট করতে নামেন মাশরাফি বিন মর্তুজা।

অধিনায়ক হিসেবে বিপিএলে এটি ছিল তার শততম ম্যাচ। কিন্তু গত ম্যাচের মতো এবার ব্যাট ঝড় তুলতে পারেননি সিলেট অধিনায়ক, ফেরেন কেবল এক রানেই। রাসেলের বলে কাভারে থাকা ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ দেন তিনি।

২৬ রানে দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে সিলেট। কিন্তু নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে তারা। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৭৯ রান আসে তাদের ব্যাট থেকে। এর মাঝে শান্ত ছুঁয়ে ফেলেন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এক আসরে ৫০০ রানের মাইলফলক।

ফাইনালের আগে তার দরকার ছিল ৪৮ রান। ৩৮ বলে হাফ সেঞ্চুরিও তুলে নেন শান্ত। কিন্তু ৪৫ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৬৪ রানেই থামতে হয় তাকে। ইনিংসটি খেলার পথে দুইবার জীবনও পান শান্ত। অষ্টম ওভারে তানভীর ইসলামের বলে ক্যাচ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন শর্ট মিডউইকেটে থাকা ইমরুল কায়েস।

কিন্তু শান্তর শটের জোর এতটাই ছিল যে তা তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হন কুমিল্লা অধিনায়ক। তাতে ৫১৬ রান নিয়ে আসর শেষ করেছেন শান্ত। বাঁহাতি এই ওপেনারের পর মুশফিক যোগ্যসঙ্গী হিসেবে কাউকে পাননি। একে একে বিদায় নেন রায়ান বার্ল, থিসারা পেরেরা, জর্জ লিন্ডা ও জাকির হাসান। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৩ রান করেন বার্ল। মুস্তাফিজের শিকার হওয়ার আগে দুইবার জীবন পান লিন্ডা।

পরপর দুই বলে তার ক্যাচ ছাড়েন মঈন আলী ও লিটন দাস। পুরো ইনিংসজুড়েই কুমিল্লার ফিল্ডিং ছিল অবিশ্বাস্য বাজে। তবে মুশফিক অপরাজিত থাকেন শেষ পর্যন্ত। ৪৮ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৪ রান করেন তিনি। রাসেলের করা শেষ ওভার থেকে একাই তোলেন ১০ রান। তাতে ৭ উইকেটে ১৭৫ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় সিলেট। কুমিল্লার হয়ে মোস্তাফিজ দুটি, রাসেল, নারাইন, তানভীর ও মঈন নেন একটি করে উইকেট।

রান তাড়ায় নেমে অবশ্য ৩৪ রানের মধ্যে সুনিল নারিন (৫ বলে ১০) আর ইমরুল কায়েসকে (২) হারিয়ে বিপদে পড়েছিল। এরপর চার্লসকে নিয়ে ৫৭ বলে ৭০ রানের জুটি গড়েন লিটন। ৩৯ বলে ৫৫ রানের একটি ইনিংস খেলেন লিটন, যাতে ৭ চারের সঙ্গে ছিল একটি ছক্কার মার।

এর আগে এবারের বিপিএলে দুরন্ত ছন্দে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত আর মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিমের হাফসেঞ্চুরিতে ভর করে ৭ উইকেটে ১৭৫ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় সিলেট।

মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেন কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। ব্যাটিংয়ে নেমে সুবিধা করতে পারেননি তৌহিদ হৃদয় (০)। মাশরাফি আরও একবার নেমে গিয়েছিলেন ওয়ান ডাউনে। তবে আজ ৪ বলে মাত্র ১ করে আউট হয়ে যান সিলেট দলপতি।

দ্বিতীয় উইকেটে শান্ত আর মুশফিক মিলে ৫৬ বলে ৭৯ রানের জুটি গড়ে বিপদ সামাল দেন। শান্ত ৪৫ বলে ৯ চার আর ১ ছক্কায় ৬৪ রানের ইনিংস খেলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মঈন আলির বলে।

এরপর রায়ান বার্ল ১১ বলে ১৩, থিসারা পেরেরা ০ আর জর্জ লিন্ডে ৬ বলে ৯ রান করে ফিরে গেলে মুশফিক একাই হাল ধরেন। ৪৮ বলে ৫ চার আর ৩ ছক্কায় ৭৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে ৩১ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট।